খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু
জাতির পিতার ১০৩তম জন্মদিনে ইশতিয়াক মাহমুদের নিবেদন
‘বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার দেশ
সহমর্মিতা বাংলাদেশ’ নামক
স্বপ্নময় আন্দোলনের এক বিনয়ী বয়ান
খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু
আলেজেরিয়ায় জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের সম্মেলনে
কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাষ্ট্রো বলেছিলেন
‘আমি হিমালয় দেখিনি আমি মুজিবকে দেখেছি’
দীর্ঘকাল এই কথার মর্মার্থ বুঝতে
আমি ব্যর্থ হয়েছি।
বাবা শেখ লুৎফর রহমান
এবং মা সায়েরা খাতুনের সাথে
বঙ্গবন্ধুর এই কালজয়ী ছবি
আমার চিন্তার জটকে খুলে দিয়েছে
হিমালয় পর্বতসম এমন মহা-মানবই
কেবল পারেন নিজ পিতা-মাতাকে
শিশুর মতো বুকে জড়িয়ে নিতে
তাই তাঁর মুখে শ্রদ্ধা-মিশ্রিত যে মমতা ভরা হাসি
তা যেন যুগ-যুগজন্মান্তরের শ্রেষ্ঠ হাসির একটি হাসি।
স্মিত হাসির মুখচ্ছবি,কি অসাধারণবিনয়ী দৃষ্টি ।
ছয় ফুট দীর্ঘ খোকার শ্রদ্ধাবনত হয়ে
প্রাণপ্রিয়বাবা-মার কাছে আবার খোকা হবার
কি প্রাণান্ত চেষ্টা!
এ ইতিহাসের এক ‘কালজয়ী’ ছবি।।
যেখানে যুক্ত হয়েছেন সমগ্র বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান
আর সাথে আছেন
যোগ্য পূর্বসুরী মা সায়েরা খাতুন আর বাবা লুৎফর রহমান।।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাবা-মা
এটা বলা কি অত্যুক্তি হয়েছে? কখনোই না।
তাই আমি বলি
মা সায়েরা খাতুন যেমন সুন্দর তাঁর নাম
তেমন নিরীহ, সুন্দর তাঁর চোখের দৃষ্টি
কালো ফ্রেমের ভেতরে মায়া ভরা চোখ
কি অসাধারণ অব্যক্ত তাঁর ভাষা!
ঠিক ব্যাখ্যা করা যায় না
কিন্তু বুঝতে পারি, অনুভব করি তাঁর ঐ দুই চোখে
আমার,আমার দুই কন্যা ও প্রজন্ম-প্রজন্মান্তরের
জন্যেও আছে যে তাতে ভালবাসা
অপারস্নেহ, মমতা আর মায়া।।
সেই দুই চোখেকেমন একটা কান্না-কান্না, কষ্ট-কষ্ট ভাব
কিন্তু তাও না
সমগ্র মানব জাতির জন্যেই যে,
আছে তাঁর উদ্বেগ-উৎকন্ঠা।
সমাজ বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে
নিবিড় পর্যবেক্ষণ থেকেই আমি বলছি
এ দেশের বাবারা অনেক রক্ষণশীল ও সাবধানী
কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে পেলাম আমরা
এক আধুনিক, উদার, স্নেহময়ীঅসাধারণ পিতা
সারা জীবন পুত্র খোকাকে আগলে রাখলেন
আর দিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ
মায়া-মমতা-ভালোবাসা আর শিক্ষা।
প্রত্যন্ত টুঙ্গী পাড়ার বাসিন্দা হয়েও
পিতা শেখ লুৎফর রহমান
ছেলে শেখ মুজিবের
জন্যে ক্রীড়া, শিক্ষা-বিনোদন
সব কিছুর জন্যেই করেছেন সবোর্চ্চ চেষ্টা।
সেই চল্লিশের দশকে ছেলে শেখ মুজিবকে
পড়িয়েছেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে
যে প্রতিষ্ঠান সে সময়ের ভারত সেরা।
এমনকি বিলেতে বার এট-ল- পড়াবার জন্যেও
জমি বিক্রিতেও তাঁর ছিলনা কোন দ্বিধা।
পুত্র খোকার সফল আন্দোলন-সংগ্রামেও দিয়েছেন
সার্বিক সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা।
তাই আমরা দেখতে পাই সদ্য কারামুক্ত
পুত্রের সাথে খোলা জীপে আছেন তাঁর
স্নেহময়ী, উদার-সাহসী পিতা।
সুযোগ্য পুত্র তাঁর আত্মজীবনীতে অকুন্ঠচিত্তে লেখেন
আমার পিতার যে স্নেহ আমি পেয়েছি
আর আমি তাকে কত যে ভালবাসি …
পিতা-মাতা সন্তান-সন্ততি
ও পরিবারের জন্যেই কেবল নয়
সমগ্র বাঙ্গালি জাতি ও মানবগোষ্ঠীর
জন্যেই যে আছে তাঁর ভালোবাসার এক অতি গভীর আকুতি।
তাই বিশ্ব শ্রেষ্ঠ দার্শনিক, সংস্কারক ও রাজনীতির কবি
বঙ্গবন্ধু বলেছেন (সূত্র: সরকারের বর্ষপঞ্জি- ২০১৮)
‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি।
একজন বাঙালি হিসাবে যা কিছু বাঙ্গালীদের সাথে সম্পর্কিত
তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়।
এ নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা’।
ভালোবাসা নিয়েই বঙ্গবন্ধুর আছে অজয় কথামালা
তিনি আরেকবার বলেছিলেন
‘আমার সবচেয়ে বড় শক্তি
আমি আমার দেশের মানুষকে খুব ভলোবাসি
আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতাআমি তাদেরকেখুব বেশি ভালোবাসি’।
তাই বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন বিষয়ে
বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা
সফল রাস্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার বিনয় মন্তব্য
‘এ উন্নয়ন কোন ম্যাজিক নয়
সবটাই হলো ভালোবাসা যা আমি
আমার বাবা-মার কাছ থেকে শিখেছি’
(খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ভ্রমণকালে)
আসলে এ জন্যেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন
পেয়েছে এক নতুন মাত্রা
বিশ্বে এসেছে নতুন বাদ
মুজিববাদ মুজিববাদ।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অর্থ্যাৎ
যেখানে আছে
জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা
সাথে ভালোবাসার অমোঘ শক্তি।
কিন্তু ভালোবাসা, শান্তি,দেশের মানুষের বিরুদ্ধে আছে ভয়ঙ্কর সব প্রতিবন্ধকতা
বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘কারাগারের রোজনামচা’-তে যাকে অভিহিত করেছেন
তা হলো বেইমান আর বিশ্বাসঘাতকতা।
বাংলার স্বাধীন রাজা দাউদ কারানীর
মন্ত্রী শ্রীহরি বিক্রম-আদিত্য এর শঠতা
সেই পথ ধরে মীর জাফর আলি খাঁ
আর ইতিহাসের জঘন্যতম নরাধম
বেঈমান খোন্দকার মোশতাক যার নিচুতা-হীনতার
কথা বলে শেষ করা যাবে না।
এই দলেই এখন আছে খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া
তাদের সাথে যোগ দিয়েছে
সুশীল সমাজের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা।
তাদের দলে কয়েকজনের মধ্যে আছে আমার ভগ্নিপতি
বদিউল আলম মজুমদার ও অন্যেরা।
তবে এদের চোখ রাঙ্গানিতে
আমরা এতোটুকু বিচলিত নই কেননা
আমাদের নেতা হলেন
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।।
এর সাথে আমাদের জাতির আছে গৌরবোজ্জ্বল এক ইতি কথা।
‘একুশ মানে মাথা নত না করা’
কি দারুণ উদ্দীপনা-ময় কথা
কয়েকদিন পরে মার্চের ৭ তারিখে সেই অমর কাব্যখানি
বঙ্গবন্ধুর বজ্রনির্ঘোষ বাণী
‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
৭ তারিখের ১০ দিন পরে ১৭ই মার্চ
টুঙ্গিবাড়ির এক নিভৃত পল্লীতে এক মহাপুরুষের জন্ম নেয়া।
এর পরেই ২৬শে মার্চ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা।
‘৫২ এর ভাষা শহীদ, ‘৭১ এর ৩০ লক্ষ প্রাণ, ‘৭৫ এর মহাপ্রয়াণ
বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রি শেখ হাসিনা শোককে করেছন ক্ষুরধার
১৬ কোটি বাঙ্গালি আজ তাঁর নেতৃত্বে অবিচল
ইউনুস-বিশ্ব ব্যাংক-মার্কিন চক্র দিশেহারা
দেখছে তাকিয়ে পদ্মা সেতু ও অসংখ্য মেগা প্রকল্পের এগিয়ে চলা
আমরা ৫২, ৬২, ৬৬, ৬৯, ৭১, এর উত্তরাধিকার
আমরা আজ মুক্ত স্বাধীন ভাগ্যবানেরা
বীর নেত্রী শেখ হাসিনার সকল বন্ধুর পথের অকুণ্ঠ সহযাত্রী।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় হোক বিশ্ব মানবতার।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা
পূর্ণ আস্থা নিয়ে বলছি
‘বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার দেশ সহমর্মিতা বাংলাদেশ’ এর আমাদের স্বপ্নময় আন্দোলনে
তৃণমূল পর্যায়ে আমরা যদি
প্রশিক্ষণ পরিচালনা করতে পারি
তবে তা হবে অভূতপূর্ব সাংস্কৃতিক আন্দোলনের এক মহান সূচনাকারী।
এই প্রশিক্ষণ উপকরণে আরো আছে
মাটি ও মানুষের সাথে সম্পৃক্ত নতুন ধারার কর্মসূচি।
যেমন সেখানে আছে সমবেতভাবে জাতীয় সঙ্গীত গাইবে সংগঠিত গ্রামবাসি।
আরো আছে গ্রামাঞ্চলে উন্নত আবাসন ধারণা
(আপনার ব্রেইন চাইল্ড পল্লী জনপদ থেকেই গৃহিত)
বিশ্ব-ব্যাপি কর্পোরেট আগ্রাসনের বিরুদ্ধে
আদর্শিক চ্যালেঞ্জ গড়ে তোলার জন্যে জন-বান্ধব গবেষণা।
প্রত্যন্ত পল্লীতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সার্বজনীন
শিক্ষা-স্বাস্থ্য, ক্রীড়া ও শরীরচর্চ্চা বিষয়ে
সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে
দেশ ও মানবতার শত্রু জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদকে
চ্যালেঞ্জ ঘোষণা।।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় হোক বিশ্ব মানবতার।
ম. ইশতিয়াক মাহমুদ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচন পরিচালনা কমিটি টীম মেম্বার।
বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও দর্শন, মুক্তিযুদ্ধ এবং সামাজিক পুঁজি বিষয়ক লেখক, প্রশিক্ষক ও গবেষক।